অশান্ত মনিপুরে আরও ৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী
১৮ নভেম্বর, ২০২৪: ফের অশান্ত মণিপুর। মণিপুরের অশান্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও ৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী পাঠাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সোমবার অসমের বরাক নদী থেকে আরও একটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মণিপুরের জিরিবাম জেলায় সাম্প্রতিক হিংসা ছড়িয়ে পড়ার পর এটি দ্বিতীয় দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সোমবার দিল্লিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডেকেছেন এবং মণিপুরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেছেন।
অতিরিক্ত ৫০ কোম্পানি সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে ৩৫টি ইউনিট থাকবে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ), বাকিটা থাকবে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। প্রতি কোম্পানির সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০০। এমনিতেই ওখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ এবং সেনার সঙ্গে মোতায়েন রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সূত্রের খবর, রাজ্যের পরিস্থিতি দেখতে একটি দল পাঠাতে পারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
এর আগে সোমবার সকালে মণিপুরের তিনটি মামলার তদন্তভার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র হাতে তুলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। হিংসা, প্রাণহানি সংক্রান্ত এই তিন মামলার তদন্ত করছিল মণিপুর পুলিশ। তাদের কাছ থেকে নিয়ে তদন্তভার তুলে দেওয়া হল এনআইএ-র হাতে। মনে করা হচ্ছে, তদন্তে গতি আনতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যেই একাধিক জেলায় কারফিউ লাগু করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট সাত জেলায়। বুধবার পর্যন্ত নেট বন্ধ থাকবে। ইম্ফলের একাধিক সরকারি অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয় মৈতেয়ীদের সংগঠন। এমনকী মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের অফিসে গিয়ে তালা ঝোলানোর চেষ্টা করেন তারা। প্রসঙ্গত ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে মণিপুরে কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত উত্তেজনা চলছে। সংঘর্ষের কারণে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গত সোমবার জিরিবামে অসম সীমানা লাগোয়া অঞ্চল থেকে অপহরণ করা হয়েছিল ছ’জনকে। অভিযোগের তির উঠেছিল কুকি গোষ্ঠীর দিকে। দিনকয়েক পর নদীতে ছ’টি দেহ ভেসে আসে। যা নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। নদীতে দেহ মেলার পর থেকেই দিকে দিকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে মেইতেই গোষ্ঠী।
শনিবার সে রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী গোবিন্দদাস কন্ঠৌজাম, বিজেপি বিধায়ক ওয়াই রাধেশ্যাম, বিজেপি বিধায়ক পাওনাম ব্রজেন, কংগ্রেস বিধায়ক টিএইচ লোকশ্বরের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পৈতৃক বাড়িতে হামলার অভিযোগও ওঠে। হামলা হয় মণিপুরের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সাপম রঞ্জন, বিজেপি বিধায়ক তথা মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের জামাতা আরকে ইমোর বাড়িতেও। রবিবার দফায় দফায় মণিপুরে অশান্তি ছড়ায়। জিরিবামে বেশ কয়েকটি গির্জা, স্কুল এবং বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে। সোমবার সকাল থেকেই মণিপুরের পরিস্থিতি থমথমে। এই পরিস্থিতিতে হামলার হাত থেকে বাঁচতে মণিপুরের জনস্বার্থ ও কারিগরি মন্ত্রী তথা খুরাইয়ের বিধায়ক লেইশাংথেম সুসিন্দ্র মেইতেই নিজের বাড়ির সামনে বাঙ্কার তৈরি করলেন। শুধু তা-ই নয়, আত্মরক্ষার জন্য তিনি বাড়িতে অস্ত্রও মজুত রেখেছেন।
Comments